রফিক আহমদ খন্দকার (১৯৩২-২০১৩)
গ্রাম সমাজের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা ভাবনা এবং সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছা, প্রচেষ্টা এবং সেই উদ্দেশ্যে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া একজন কোমল ও মানবিক হৃদয়ের অধিকারী মানুষের পক্ষেই কেবল সম্ভব। তারই প্রতিফলন হিসেবে নিজের উন্নয়নের সাথে সাথে সমাজের উন্নয়নকে একসূত্রে গেঁথে নিয়েছিলেন যে মানুষটি তিনি হলেন বাজগড্ডা রাবেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং দাতা সদস্য জনাব রফিক আহমদ খন্দকার। তিনি ১৯৫০, ১৯৫২ এবং ১৯৫৮ সালে যথাক্রমে মেট্রিকুলেশন, আই. এ, এবং ব্যাচলর অব মেডিসিন (হোমিওপ্যাথিক) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫০ এর দশকে তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন ইউপি-র সম্মানিত সদস্য ছিলেন এবং স্বল্প দিনের মধ্যেই তিনি স্ব-ইচ্ছায় সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং চাকুরিতে যোগদান করেন। চাকুরির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে নিজেকে প্রতিনিয়ত নিবেদিত রাখতেন। তিনি একটি পারিবারিক পাঠাগারও গড়ে তুলেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর সততা এবং সম্মানের সাথে কুমিল্লা জেলা পরিষদ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদে চাকুরি করার পর ১৯৯৩ সালে উপসচিব (প্রশাসন), হিসেবে কুমিল্লা জেলা পরিষদ থেকে অবসরে আসেন। তাঁর সততা ও মানবিক পদচারণা ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, পেশাগত এবং ধর্মীয় জীবন পর্যন্ত সমভাবে পরিব্যাপ্ত ছিল।
আধুনিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় শিক্ষা-জ্ঞানের এই দুটো ধারাতেই তাঁর বিচরণ ছিলো সমভাবে। তাঁর সদাচারণের জন্য তিনি সব শ্রেণির মানুষের নিকট ছিলেন বরণীয়। জাতি-ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিকট তিনি ছিলেন সমভাবে গ্রহণযোগ্য এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।
সমাজের চারপাশের পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয় তাঁকে ভীষণভাবে পীড়া দিত। পরিবারে ও সমাজে মায়েদের সুশিক্ষা ও যথাযথ জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি উপলব্ধি করেন । কিন্তু অনুকূল পরিবেশ না থাকার কারণে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সমাজে মেয়েরা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে থাকে। মেয়েদের জ্ঞান অর্জনে এই প্রতিবন্ধকতা লাঘব করার উদ্দেশ্য নিয়ে জনাব রফিক আহমদ স্কুল প্রতিষ্ঠান করার এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পারিবারিকভাবে তিনি সাত সন্তানের জনক ছিলেন। মেয়েদের লেখা পড়ার ব্যাপারে তাঁর সহধর্মিণীর অদম্য আগ্রহ ছিল লক্ষ্যনীয়। ফলশ্রুতিতে জনাব রফিক আহমদের একক প্রচেষ্টায় ১৯৮৮ সালে বাজগড্ডা রাবেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন, যা ২০০০ সালে সরকারের এমপিও ভূক্ত হয়। মহৎ প্রাণ এই ব্যক্তিটি ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর দিবাগত রাত্রি ১০টা ২৩ মিনিটে আল্লার ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন।